Wednesday, March 23, 2022


মফস্বল ও বসন্ত
আমাদের মফস্বলের ছোটখাটো জীবনে বসন্তের তেমন পরাক্রম ছিল না। এরকম বলা যায়, মানে বলা যেতেই পারে যে, বছরের শুরুতেই দোল আর কালীপুজোর দিন,  দুটোতেই বিরাট একটা কালো রঙের ধাব্বা কেউ মেরে রাখত। ওই দুটো দিন বাড়ির বাইরে পা রাখা ছিল নিষেধের তালিকায় উজ্জ্বল। সমস্ত বসন্তকাল জুড়ে ছিল রিহার্সাল। গান হচ্ছে, নাচ হচ্ছে। নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল। গানের দল বা নাচের দল বলে আলাদা কিছু ছিল না স্টেজের পিছনে বসে গান গেয়ে যে কেউ অনায়াসে পরের নাচে  পা মেলাতে যেত। টিংকু ওর  আলো আলো গলায় গান গাইত,  ও আমার চাঁদের আলো। মাকে এসে বলত, জেঠিমনি, গানটা একটু লিখে দাও না। মা তাঁর শ্বশুরবাড়িতে এলেন যখন, তখন সঙ্গে এনেছিলেন তিন খন্ড গীতবিতান। তার প্রথম খন্ডের ৪৭  নম্বর পৃষ্ঠায়, 'দাঁড়াও আমার আঁখির আগে' গানটার ওপর একটা রাইট চিহ্ন ছিল।  এই বসন্ত থেকে এভাবেই গলা সাধতে সাধতে একদিন ভোর এসে দাঁড়াত বৈশাখের দরজায়। মামাবাড়ির বড়োটগর গাছ থেকে ঝুড়ি ভরে  ফুল তুলে, ফুলের উপরটুকু একসঙ্গে জড়ো করে হাতের-গলার-মাথার গয়না। যেদিন সন্ধেয় ফাংশনের নাম লেখা থাকত, সেদিন অবধারিত ছিল কালবৈশাখী। তারপর  অপেক্ষা গড়াতে গড়াতে পরদিন সন্ধ্যা। মালা থেকে খসে পড়া এক একটি পাপড়ি, একেক ঋতুর ফুল হয়ে ফুটে উঠত সেদিন। তাই 'বসন্তোৎসব'  আমরা বলিনি কখনো।
                   কাকলি সেনগুপ্ত ( ২২/০৩/২২)

No comments:

Post a Comment