Sunday, October 7, 2018

কারো সঙ্গেই আমার সম্পর্ক তেমন সহজ হয় না।চতুর্দিকে লেগে থাকা  অবাস্তবতা ছাড়েও না,আবার পরিচয় চিহ্নও হয়ে ওঠে না।কাদামাটি ছেনে যে অবয়ব সারাদিনে নির্মাণ করি সন্ধ্যায় তাকে চুরমার করার আকূতি প্রবল হয়ে ওঠে।ঝড়ের সমুদ্রের মুখে দাঁড়িয়ে অমোঘ  হয়ে ওঠে এক পুণ্যস্নান।আমি  নই,আমার ছায়া যেন ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের প্রতিস্পর্ধী।

Friday, August 24, 2018




                                                                 সহজ

Acceptance,গ্রহণযোগ্যতা।।সংক্ষেপে বলিতে গেলে হিং টিং ছট।বিশদে তার  প্রবাহমানতা উপত্যকা ছুঁয়ে হেঁটে যাওয়া নদীর মতো।গ্রহণযোগ্য করে তোলা,নিজেকে।আর জানালাটা খুলে রাখা।বাতাসের অপেক্ষায়।বর্ষা-বসন্ত-হিম-বিরহ অবিরল আসুক সে গলিপথে।তাকে বুকে করে বাঁচতে শেখাও acceptance,গ্রহণযোগ্যতা।
আমার প্রথম বিবাহ যাঁর সঙ্গে হয় সম্পর্ক খারিজ করবার আগে তিনি বলেছিলেন,দশ বছরে নিজের কোনো গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পারনি।Inefficient  woman. কোনো জবাব দিইনি এসবের।এসব চাপান-ওতোরে আমার আস্থা নেই।কখনও ছিল না।মনে মনে কইলাম,সেতো বাপু তুমিও পারনি।নইলে ঘর ছাড়ার বেদনা আমায় বিবশ করে না কেন?
  তবে এসব নিছক কথার পিঠে কথা।আসল ব্যাপার হল শব্দটি শক্তিমান।নিমেষে ছিন্নমূল করে দিতে পারে।আমিও প্রথমে বিচলিত বোধ করেছিলাম।কথার মোড় ঘোরাতে কুশলতা প্রয়োজন।যা তখনও রপ্ত করতে পারিনি।কাজেই বিলো দ্য বেল্ট আঘাতে বেশ একটু ফুটিফাটা হয়ে গেলাম।এরকম হলে আমি নিজের সঙ্গে কথা বলি।বলো তো আরশি সত্যটি তবে কী? আরশি বললে দুদিকে শিষ দেওয়া  পেন্সিল।যেদিকেই ফেরাও দাগ একটা পড়বেই।
এতো জব্বর হেঁয়ালি।
তা একটু তো বটেই।ফেরার রাস্তা ধরবে নাকি জয়ের হাইওয়ে সেটাই অমোঘ।
দুই পথের প্রান্তেই ফিরে যাওয়া।কাজেই হাইওয়েই ধরে নাও।
মানুষ ছোঁবার আগে বাতাস ছুঁয়েছে তোমায়।সে বাঁচালে কে আর অন্য কথা বলে?

Wednesday, August 22, 2018

                                           নিজের সঙ্গে দেখা.....


আসলে দেখাটুকুই লিখি। প্রতিটি মানুষের দেখা পৃথক। নামের মতোই। এমনকি একই গ্রুপের  রক্তের লোকজনেরও। একই রাশি বা নক্ষত্রে বসবাসকারী,সহোদরেরা সকলেই। পৃথক ঘৃণাতেও। শত্রুতার কথা কইবনা। সে বড়ো মহৎ বিষয়। ছোটো ফ্রেমে আঁটেনা।
  তোমার সঙ্গে দেখা না হলে—- এই তুমিটা ধারাবাহিক।কৈশোরের প্রত্যাখ্যান আর মধ্যবয়েসের তুমির শরীর একটাই।মুখ আলাদা।সুতোটি  থাকে,না থাকার মতো করে।পুরোপুরি নেই হয়ে গেলে আরও একগুচ্ছ বাতিলের কাঁথাকানি।ঘুড়ির মতো ল্যাজামুড়ো থ্যাঁতলে আছড়ে পড়া।মধুবাতাস তখন আর অনুকূল বহে না।অসমান দাড়িয়াবান্ধা।যেখানে জড়িয়ে থাকা,সেখানেই স্রোত থিতু হলে তাকে কি অবসান বলে?আমি অবসান চাইনি কখনও।সে হল যতিচিহ্নে ভুল করে অর্ধবাক্যে স্মৃতি সমাপন।দৃষ্টি ক্ষীণ হয়।নিস্পত্র শাখায় প্রথম বসন্ত আসে,ফিরেও যায়।তুমি সঞ্জয়ের  মতো পৃথিবী বলবে? আমি বিবরণ লিখব——

Tuesday, August 21, 2018


                                                        প্রতিটি সম্মেলকের পরে
                                   
কথা না বলে কলরব বলা ভালো।কলরব সম্মেলক।প্রাণে প্রাণ মিল করে দেয়।আমার কথার সঙ্গে তোমাদের ভেসে যাওয়া।আমিও বয়ে যাই কখনও কখনও।তেমন তেমন মানুষ পেলে ঝুলি উপুড় করার আদত আমার।দু-নম্বর প্ল্যাটফরম থেকে খুকুমণি বলে ডাক দিল মন্দিরা।আমিও মেতে গেলাম।রেললাইন পেরিয়ে শব্দ বয়ে যায়।তারপর মাঝখানে একটা আস্ত রেলগাড়ি।আমার অক্ষরেরা সহযাত্রী তখন।
শব্দ মানে অক্ষরও মাঝপথে নেমে যায়?স্টেশন এলে?কে তাকে বয়ে নিয়ে যায়?পিঁড়ি পাতে,স্বাদুজল দেয়?এইসব বুঝতে চাই ইদানীং।ভালোবাসি,ভালোবাসা বুঝি না তেমন ,অবহেলাও  না।যেখানে যাবার নয় সেখানে নোঙর করি।ভুল জলে,প্রতিকূল মোহনায়।ফিরে আসতে বেলা গড়িয়ে যায়।পেরিয়ে যায় অন্নগ্রহণের কাল।বিছানাটি পেতে রাখি।পৃথিবীর পাশটিতে।
                             ২১/০৮/১৮

Friday, August 17, 2018

                              

                                           খেলনা পাহাড় 


আজ শ্রাবণের শেষ দিন।৩২ / ০৪/ ১৪২৫।আকাশে এখন শরতের গন্ধ।ভাদ্রের ধারার সঙ্গে হঠাৎ ঝলমল রোদ্দুর।শিউলির প্রস্ফোটন কাল।এসময়ে বাহির ডাকে।সেই কোন শৈশব থেকে।মেঘের দল পাহাড় সেজে আকাশে বেড়াতে  বেরোত। বাবুনকাকু তখন নাইবার সময় পেত না।ঠাকুর বানাতে বসে অত ভাবলে চলে?সেবার আবার নতুন রকম।দুর্গা পুজো শেষ হলেই হুড়মুড় করে এসে যাবে কৃষ্ণপক্ষ।মৃম্ময়ী শক্তির গায়ে আঠা দিয়ে লাগানো আইসক্রিমের চামচ।একদম সত্যিকারের মতো।আসল নয়,আসলের মতো।ঝুলন ঝুলন পাহাড়।অনেকটা শরতের মেঘের মতো।ফেলে দেওয়া বাতিল কাঁথাকানি থেকে আনন্দ নির্মাণ করাই ছিল এক দস্তুর।
     
         
আমরা ছিলাম একটু পৃথক।ঠিক অতটা আম আদমী গোছের নয়।নামী সিরামিক কারখানায় চাকরি করতেন বাবা। ফাইন চায়না,বোন চায়নার ওই রকম মানের ক্রকারি আর তৈরি হবে না।হাই টেনশনের ইনসুলেটার উৎপাদনেও দেশের এক নম্বর জায়গাটা বেঙ্গল পটারির ছিল।তবু কী অদ্ভুত ভাবে প্রোডাকশন কমতে শুরু করল।একটা নতুন শব্দ শুনলাম একদিন।লকআউট।কী হয় লক আউট হলে?কারখানা বন্ধ হয়।কয়েক মাসের বেতনে সারাটা বছরের খরচ চালাতে হয়।না চললে ঋণ।কর্জ পরিশোধ ছিল আরও ভয়াবহ।নাহ।এসব কথা আমাকে বলেনি কেউ।শুধু লী-কলিন্স ছেড়ে দেশবন্ধুতে ভর্তি হওয়ার সময়ে বাড়িওয়ালার মেয়ে মীরাপিসি বলেছিল,তোর ভালো বিয়ে হবে না।কালো তুই।এখন আবার গরীব।গরীব মেয়েদের ভালো বর হয় না।দ্বিতীয় শ্রেণীতে যাতায়াত করা বালিকা একটানে সংসারে দ্বিতীয় শ্রেণীর হয়ে গেলাম।কাউকে বলতে পারলাম না।বাবাকেও না।যদি দুঃখ পায়?

আজ বিকেলের পাহাড় পাহাড় মেঘগুলোই এলোমেলো করে দিল সব।হাসি দিদার বলা গল্পটা আমি  স্পষ্ট দেখতে পেলাম।আটপৌরে শাড়ি পড়া বছর তেইশের এক মহিলা আউটডোরে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে ইংরিজিতে কথা বলছেন আর সঙ্গে আসা রোগিণির বাড়ির লোক অবাক হয়ে দেখছে।পরে বলতেন আমাদের স্কুলের ইংরিজির টিচার কে ছিলেন জানো? প্রব্রাজিকা শ্রদ্ধাপ্রাণা।আমি নিবেদিতায় পড়তাম।


                                Voice...

কিছু কথা সকলের থাকে। সোনার কলম বা ধুলোমুঠি। সব্বার। আমার মতো অল্পবিদ্যা বা স্বল্পমেধার মানুষেরও একটা  voice থাকে।ভয়েজও বলা যায়। নিরক্ষরেখা বরাবর। বিশ্ব হতে চিত্তে বিচরণ।
এই স্বর বজায় রাখা তেমন সহজ  নয়।দুরূহও নয় আবার। যোগ্যতমের উদবর্তনের পর নাহয় মানুষ হিসেবে টিঁকে থাকা গেল,কিন্তু তারপর? নেই, আছে, সাদা, কালো, বাদামী, হিঁদু, মোসলেম,জৈন,কৃষ্ট, খৃষ্ট করতে করতে এক অদ্ভুত যাপন। ঘোলাটে, গোলমেলে। একের পর এক স্টেশন আসে। চলেও যায়।সহযাত্রী ওঠেন, কেউ নেমে যান। গন্তব্য ঘনিয়ে এলে আলো ধরেন তিনি। তাঁর মুখ কেমন জানি না। শুধু জানি তিনি প্রবল, বিরাট। 'মহাপ্রবলবলী'।
       এইসব নাই কথা কারো কাজে লাগে না।  আসে যায়। উড়তে উড়তে পৃথিবী ছাড়িয়ে যায়, ছাপিয়ে যায় না। স্বস্তিতে পাশ ফিরে শোয় আমার ছোটোখাটা ছায়ার আদল।
                                     15/08/18