Friday, August 17, 2018

                              

                                           খেলনা পাহাড় 


আজ শ্রাবণের শেষ দিন।৩২ / ০৪/ ১৪২৫।আকাশে এখন শরতের গন্ধ।ভাদ্রের ধারার সঙ্গে হঠাৎ ঝলমল রোদ্দুর।শিউলির প্রস্ফোটন কাল।এসময়ে বাহির ডাকে।সেই কোন শৈশব থেকে।মেঘের দল পাহাড় সেজে আকাশে বেড়াতে  বেরোত। বাবুনকাকু তখন নাইবার সময় পেত না।ঠাকুর বানাতে বসে অত ভাবলে চলে?সেবার আবার নতুন রকম।দুর্গা পুজো শেষ হলেই হুড়মুড় করে এসে যাবে কৃষ্ণপক্ষ।মৃম্ময়ী শক্তির গায়ে আঠা দিয়ে লাগানো আইসক্রিমের চামচ।একদম সত্যিকারের মতো।আসল নয়,আসলের মতো।ঝুলন ঝুলন পাহাড়।অনেকটা শরতের মেঘের মতো।ফেলে দেওয়া বাতিল কাঁথাকানি থেকে আনন্দ নির্মাণ করাই ছিল এক দস্তুর।
     
         
আমরা ছিলাম একটু পৃথক।ঠিক অতটা আম আদমী গোছের নয়।নামী সিরামিক কারখানায় চাকরি করতেন বাবা। ফাইন চায়না,বোন চায়নার ওই রকম মানের ক্রকারি আর তৈরি হবে না।হাই টেনশনের ইনসুলেটার উৎপাদনেও দেশের এক নম্বর জায়গাটা বেঙ্গল পটারির ছিল।তবু কী অদ্ভুত ভাবে প্রোডাকশন কমতে শুরু করল।একটা নতুন শব্দ শুনলাম একদিন।লকআউট।কী হয় লক আউট হলে?কারখানা বন্ধ হয়।কয়েক মাসের বেতনে সারাটা বছরের খরচ চালাতে হয়।না চললে ঋণ।কর্জ পরিশোধ ছিল আরও ভয়াবহ।নাহ।এসব কথা আমাকে বলেনি কেউ।শুধু লী-কলিন্স ছেড়ে দেশবন্ধুতে ভর্তি হওয়ার সময়ে বাড়িওয়ালার মেয়ে মীরাপিসি বলেছিল,তোর ভালো বিয়ে হবে না।কালো তুই।এখন আবার গরীব।গরীব মেয়েদের ভালো বর হয় না।দ্বিতীয় শ্রেণীতে যাতায়াত করা বালিকা একটানে সংসারে দ্বিতীয় শ্রেণীর হয়ে গেলাম।কাউকে বলতে পারলাম না।বাবাকেও না।যদি দুঃখ পায়?

আজ বিকেলের পাহাড় পাহাড় মেঘগুলোই এলোমেলো করে দিল সব।হাসি দিদার বলা গল্পটা আমি  স্পষ্ট দেখতে পেলাম।আটপৌরে শাড়ি পড়া বছর তেইশের এক মহিলা আউটডোরে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে ইংরিজিতে কথা বলছেন আর সঙ্গে আসা রোগিণির বাড়ির লোক অবাক হয়ে দেখছে।পরে বলতেন আমাদের স্কুলের ইংরিজির টিচার কে ছিলেন জানো? প্রব্রাজিকা শ্রদ্ধাপ্রাণা।আমি নিবেদিতায় পড়তাম।

2 comments: